শ্রীলঙ্কায় গত নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ১১ দশমিক ১ শতাংশ। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দেশটির আদমশুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কারণে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এমনিতে বড় আঘাত লেগেছে শ্রীলঙ্কার পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে। এরপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাঁচাতে নানা ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল লঙ্কান সরকার, যার জেরে সেগুলোর ঘাটতি দেখা দেয় বাজারে। এর কারণেও দেশটিতে হু হু করে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।
শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পণ্য আমদানির জন্য মার্কিন ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। এ অবস্থায় কয়েক মাস ধরেই দুধ, চিনি, ডালের মতো নিত্যপণ্য বিক্রি সীমিত করে দিয়েছে সুপারশপগুলো।
বুধবার শ্রীলঙ্কার সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে চালুর পর থেকে সম্প্রতি জাতীয় ভোগ্যপণ্য মূল্য সূচক (এনসিপিআই) বেড়েছে সর্বোচ্চ হারে। মাত্র এক বছরের তুলনায় দেশটিতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
গত মঙ্গলবার লঙ্কান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব উদিত জয়সিংহে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, বন্ধু দেশগুলো থেকে আমাদের ভুট্টার মতো শস্য ধার নিতে হতে পারে এবং খাবার রেশনিংয়ের কথা ভাবতে হতে পারে, যেন মা এবং অসুস্থদের খাওয়ানো যায়। সেক্ষেত্রে অন্যদের হয়তো ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
তবে এই সতর্কবার্তা দেওয়ার একদিন পরেই জয়সিংহেকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অফিস। তাকে কেন সরানো হলো, এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
শ্রীলঙ্কার খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয় রাসায়নিক সার আমদানিতে সরকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর। তবে প্রবল কৃষক আন্দোলনের মুখে গত মাসে এই নীতি থেকে সরে এসেছে লঙ্কান কর্তৃপক্ষ।
গত নভেম্বর মাসের শেষে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫৮ কোটি ডলার। অথচ রাজাপাকসে ক্ষমতাগ্রহণের সময় ২০১৯ সালেও দেশটির হাতে অন্তত ৭৫০ কোটি ডলার ছিল।
রিজার্ভে এমন বিপর্যয়ের কারণে লঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবার কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এমনকি, বিদেশ থেকে ফেরা ব্যক্তিদের হাতে খুচরা মুদ্রা থাকলে তা-ও জমা দিতে বলা হয়েছে।
সূত্র: এএফপি, এনডিটিভি