এখনও সমাজে নারীর প্রতি হীনমন্য মনোভাব দেখানো হয়। তারা নিজের পছন্দমতো কিছু করতে পারে না। তাদের পছন্দকে পিষে ফেলা হয়। তাই সমাজের ভয়কে জয় করতে আঁধার ভেঙে নারীকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে নারী জোট ‘আমরাই পারি’।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) নারী দিবস উপলক্ষে সংগঠনটির আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। পরে অনলাইনেই মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।
‘আমরাই পারি’ জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য শিপা হাফিজ বলেন, সামাজিক বৈষম্য দূর করতে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নারী দিবস ও আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যে পুরুষরা তাতে সম্পৃক্ত হবেন না, আমরা তাদের নারী বিদ্বেষী বলে চিহ্নিত করব। যে নারীও করবেন না তাদেরও সেভাবেই চিহ্নিত করব। কারণ তারা সম্মানজনক জীবনযাপনে নারীকে সহযোগিতা করছেন না।
আলোচনায় বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জয়া মোহন্ত জানান, বিকেলের পর হোস্টেল থেকে ছাত্রীদের বের হতে দেওয়া হয় না। ছাত্রদের ক্ষেত্রে সে বাধা নেই। বিপদের শঙ্কায় বাবা-মাও মেয়েদের রাতে বের হতে দেন না। এর মানে হলো নারীকে দুর্বল মনে করা হচ্ছে। তার প্রতি হীনমন্য মনোভাব দেখানো হয়। নারী ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারে না। তার পছন্দকে পিষে ফেলা হয়, স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়।
বাগেরহাট জেলার আমরাই পারি জোটের ফোকাল রিজিয়া পারভীন বলেন, নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনের শুরুর দিকে নানান ধাক্কা খেতে হয়েছে। খুব যে পাল্টাতে পেরেছি তা কিন্তু নয়। ঘরে-বাইরে নারীরা এখনো নিগৃহীত হচ্ছে। আগে বলত না, ভয়-লজ্জা পেত; সেখানে কিছুটা হলেও পজিটিভ পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রতিবাদ করে, বিচার চায়; সবক্ষেত্রে বিচার হয়তো পায় না, কিন্তু চায়।
তিনি আরও বলেন, সমান অধিকার পেতে নারীকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী থাকার বিষয় ছিল। কিন্তু কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই। সেখানেও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এখনও আসেনি। সেজন্য নারীকে যোগ্য, কর্মক্ষম করতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। লড়াই ছাড়লে হবে না।
আমরাই পারি জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফারহানা হাফিজ বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার যে ভয় নারীর মধ্যে কাজ করে, তা জয় করতে হবে। নিজের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।
নারীর বিরুদ্ধে অন্যায়কে অপরাধ গণ্য করা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা-নির্যাতনে জড়িত না হওয়া এবং নারী নির্যাতন বন্ধে অন্যদের অবগত করতে ‘রাতের আঁধার ভাঙার’ শপথ পাঠের মাধ্যমে আলোচনা শেষ হয়।