এক অঙ্গে শতরুপ, দেখতে অবিকল কোন ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রির সিনেমার নায়ক। স্টাইল্টাও আলাদা, দামী সব সুটবুট। আসলে বাস্তবে তিনি পেরুতে পারেননি ৫ম শ্রেনীর গন্ডিও।
আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) পৌনে ৫টায় সিপিসি-৩ চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ এতথ্য জানান।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার মোরশেদ রানা প্রথমে জনবহুল শহরে এসে অবস্থান করে এবং তার পছন্দের একটি জায়গা বেছে নেয়। সে শহরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাঁচতারকা আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, জনবহুল এলাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসা যাওয়া শুরু করে। প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারবে এমন লোকদেরকে টার্গেট করে এবং তাদের সাথে মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে সখ্যতা গড়ে তোলে।
একপর্যায়ে যখন তাদের মধ্যে বিশ্বাস এবং গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তখন সে ভিকটিমকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে আস্তে আস্তে আকৃষ্ট করতে শুরু করে। সে ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাদের সামনে উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সাথে ফোনে (অভিনয়) কথা বলতো। চাকরি ও বিদেশে লোক পাঠানোর ব্যপারে বিভিন্ন ধরনের আশানুরুপ কথাবার্তা বলতো।
এসব কাজে টার্গেট ব্যক্তি যখন পূর্ণ বিশ্বাস করে ফেলে তখন সে বায়োডাটা ফরম পূরণ করতে হবে মর্মে নানা ধরনের ডকুমেন্ট সংগ্রহ এবং অফিসের পিয়নকে দিয়ে পূরণ করে নেবে বলে। পরে সে ভিকটিমকে নিয়ে শহরের নামীদামি হেয়ার কাটিংয়ে নিয়ে চুল কাটা এবং উন্নত মানের পোশাক পরিধানসহ পা থেকে মাথা পর্যন্ত অফিসারের মতো ভিকটিমকে সাজায়। এরপর ওই বেশে শহরের বিভিন্ন বিলাসবহুল তিন তারকা আবাসিক হোটেলের ঠিকানা দিয়ে সেখানে তার ইন্টারভিউ হবে বলে জানায়।
ভিকটিম তার দেয়া তিন তারকা আবাসিক হোটেলে পৌছালে তাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখেন। সে কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেজে ফাইলপত্র হাতে নিয়ে লিফটে করে উপরে উঠার অভিনয় করে এবং কিছুক্ষণ পর ঘুরে এসে বলে বস আপনাকে পছন্দ করেছে আপনার চাকরি হয়ে যাবে। তবে আপনার রেজাল্ট খারাপ, উচ্চতা একটু কম, বুকের মাপ কম, চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা, চাকরির অভিজ্ঞতা নেই এসব বলে ভিকটিমকে মানসিকভাবে দুর্বল করে এবং বলে যে ২-৩ লাখ টাকা বেশি দিলে বসকে ম্যানেজ করা যাবে।
পরবর্তীতে ভিকটিমের স্থায়ী ঠিকানা ভেরিফিকেশন করার কথা বলে তার বাড়িতে ২০ থেকে ৩০ দিন অবস্থান করে। সে ভুক্তভোগীকে চাকরি ও ইউরোপ-আমেরিকার পাঠানোর টাকা কোন পন্থায় যোগাড় করবে ও তার কি ধরনের সম্পদ আছে এগুলো পর্যবেক্ষণ করে সিন্ধান্ত নেয়। এরপর এসব বিক্রি করে চাকরি ও ইউরোপ-আমেরিকায় পাঠানোর টাকা যোগাড় করতে ভিকটিমকে উদ্বুদ্ধ করে স্বার্থ হাসিল করতো।
এছাড়া সে চাকরির জামানত হিসেবে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকাগুলো নিতো এবং বলতো চাকরিতে যোগদানের পরদিনই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এসময় ভিকটিমকে বলতো আপনাকে কোম্পানী থেকে দামী মোবাইল ফোন দেওয়া হবে বলে তার ব্যবহৃত দুইটি সিম নিতো এবং উন্নতমানের পোষাক পাঠানো হবে বলে শরীরের মাপ এবং সরকারি স্ট্যাম্পে ভিকটিমের ফাঁকা স্বাক্ষর গ্রহণসহ অঙ্গীকারনামা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতো। পরে প্রতারক নিজের ব্যবহৃত সিম বন্ধ করে দিয়ে ভিকটিমদের থেকে নেওয়া দুটো নতুন সিম দিয়ে আবার অন্য ভিকটিমদের সাথে প্রতারণা শুরু করতো।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত মোরশেদ ইউরোপ-আমেরিকা পাঠিয়ে ভালো কাজ দিবে বলে প্রলোভন দেখিয়েও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো। তার কৌশল এমন ছিলো যে, সে বেশিরভাগ সময় ভুক্তভোগীদের সাথে দেশের আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরগুলোর সামনে দেখা করার কথা বলতো এবং বিমান বন্দরের গেট থেকে দামী পোশাক ও একাধিক ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে বের হতো। বিমানবন্দরের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় মোবাইলে বিভিন্ন দেশের এজেন্সির সাথে ইংলিশ, বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা ব্যবহার করে ভুয়া কথা বলতো। এসময় তার হাতে স্বর্ণ ও হীরার মোটামোটা আংটি, ব্যাচলেট, গলায় চেইন পড়া থাকতো ও পকেট থেকে বিভিন্ন দেশের টাকা, অসংখ্য এটিএম কার্ড, টাকার ব্যাগ বের করে দেখাতো। এভাবে সে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে তাদের পাসপোর্ট, জাতীয়তা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং দশ থেকে বার লাখ টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছে বলেও জানায় র্যাব।