বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারের টেস্টের প্রতি অনীহার খবর অজানা নয় কারো। তবে ব্যতিক্রম যে কয়েকজন আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী মাহমুদুল হাসান জয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ডামাঢোল, চাকচিক্য আর অর্থের ঝনঝনানি খুব বেশি আকৃষ্ট করে না এই তরুণ ব্যাটসম্যানকে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ টেস্ট দলকে সার্ভিস দেওয়ার বাসনা লালন করছেন নিজের মধ্যে।
মাত্র ৪ মাসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান ডারবান টেস্টসহ তার ঝুলিতে খেলা টেস্টের সংখ্যা মোটে ৩টি। এই ৩ টেস্টের ৪ ইনিংসেই নিজের যোগ্যতার ছাপ রেখেছেন জয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে ব্যাট গাতে দিশেহারা সতীর্থরা, সেখানে নিজের টেস্ট ‘টেম্পারমেন্টের’ উত্তম প্রতিফলন দেখিয়ে একাই লড়ে যাচ্ছেন তিনি। জয়ের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়েই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের ঘরের মাঠে প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দল দারুণ শুরু পায়। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে সাইমন হারমারের শেষ বিকেলের ঝড়ে এলোমেলো টাইগাররা। ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে সফরকারীরা। তৃতীয় দিনে শঙ্কা ছিল ফলোঅন এড়ানো নিয়েই। তবে সে সব শঙ্কা উবে গেছে জয় আর লিটস দাসের ব্যাটে। তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ১৮৩ রান। জয় ৮০এবং লিটন *৪১ রান দিয়ে দিনের দ্বিতীয় সেশন শুরু করবেন।
ডারবানের উইকেট দ্বিতীয় দিনে যে ব্যবহার দেখা গেল তাতে অনেকেই মিরপুরের সঙ্গে তুলনা করেন। হারমারের স্পিন ভেলকির সামনে দিশেহারা সফরকারীরা। গতকাল বিকেলের ঝড়ে সতীর্থরা যখন আসাযাওয়ার মিছিলে, জয় তখনো একপ্রান্তে এগলে রেখে লড়েছেন। আজ নাইটওয়াচম্যান তাসকিনকে নিয়ে সকাল শুরু করেন তিনি। দ্বিতীয় দিন শেষে মেহেদী হাদান জানান, দলের লক্ষ্য তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন খেলা। সে লক্ষ্যে লেটার মার্কই তুলেছে বাংলাদেশ দল।
তবে সকালে সে অর্থে ভালো শুরু পায়নি মুমিনুল হক বাহিনী। ০ রানে ব্যাট করতে নামা তাসকিন ফিরেছেন দিনের তৃতীয় ওভারেই। উইলিয়ামসের অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বলে ব্যাট চালিয়ে দেন বাঁহাতি তাসকিন। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় গালিতে। দ্বিতীয় চেষ্টায় হাতে জমান ভিয়ান মুল্ডার। ১০ বল খেলে তাসকিন করেন তাসকিন।
এরপর গল্পটা বাংলাদেশের নামে। যেখানে ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে লিটনকে নিয়ে দলকে টেনে যাচ্ছেন জয়। মাঝে তুলে নিয়েছেন নিজের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফিফটি। হারমারকে চমৎকার স্ট্রেট ড্রাইভে চার মেরে ১৭০ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান জয়। সেই জয় এখন ছুঁটছেন সেঞ্চুরির পথে, ৮০ রানে অপরাজিত আছেন তিনি। এটিই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
এই সেশনে বাংলাদেশ দল ১ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে তুলেছে ৮৫ রান। ১৮৩ রানে মধ্যহ্নভোজে যাওয়া বাংলাদেশ দল এখনো পিছিয়ে ১৮৪ রানে। যেখানে অপরাজিত ৮০ রানে থাকা জয় তার ইনিংসটি সাজিয়েছেন ২৩০ বলে। ৮টি চারের সঙ্গে ১টি ছয় আছে তার ব্যাটে। কম যাচ্ছেন না লিটনও। অর্ধশতকের দিকে ছুঁটছেন তিনি। ৯০ বলে অপরাজিত আছেন ৪১ রান নিয়ে।
এই দুই ব্যাটসম্যানের অবিচ্ছেদ্য ৮২ রানের পার্টনারশিপ ভাঙতে মরিয়া প্রোটিয়ারা। দুই বার রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ ডিন এলগার। জয়-লিটনের জুটি যেমন সফরকারী শিবিরে সম্ভাবনা যাগাচ্ছে, তেমনি কপালে চিন্তার ভাজ বাড়াচ্ছে স্বাগতিকদের।