কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা মাতাদের সাহায্য করা মহৎ পূণ্য
কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা মাতাদের সাহায্য করা মহৎ পূণ্য
মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম
মেয়েদের বিয়ে দেয়া প্রাথমিকভাবে বাবা-মায়ের দায়িত্ব। মুসলিম বাবার অনুমোদন ছাড়া মেয়ের বিয়ে বিশুদ্ধ নয়। অবশ্য তিনি উপযুক্ত পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে অস্বীকার করলে সেক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা আছে।
যাহোক, এই বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাবারা তাদের দায়িত্ব পালন করেন না। অনেক বাবারা মেয়ের বিয়ের পরিবর্তে বেশি আগ্রহী নিজের স্ট্যাটাস ঠিক রাখতে। ফলে ডাক্তার মেয়ের সাথে ডাক্তার ছেলে ছাড়া তিনি বিয়ে দেবেন না, যদিও বা মেয়ে রাজি। সুন্দর মেয়ের সাথে ততোধিক সুন্দর ছেলে ছাড়া বিয়ে হবে না, যদিও মেয়ের আপত্তি নেই। নিজ অঞ্চলের ছেলে ছাড়া বিয়ে হবে না, যদিও বা মেয়ে দু-পায়ে খাড়া। মেয়ের বিয়ের বয়স হলেও পড়া শেষ হওয়ার আগে বিয়ে দেবেন না, যদিও মেয়ে বিয়ের জন্য ব্যাকুল।
তাহলে বাবাদের কাজ হলো মেয়ের প্রতি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে মেয়ে যে তার কাছে আল্লাহ তাআলার দেয়া আমানত, তার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত দায়-দায়িত্ব জেনে পালন করা। তাকে কাজ করতে না পাঠানো। নিজের স্বার্থে তার বিয়েকে বিলম্বিত করবে না, কিংবা তার অপছন্দনীয় বা অপাত্রে বিয়ে দেবে না।
কিন্তু এতদসত্বেও কিছু কিছু কারণে সংসারে মেয়েরা অনেক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বাবা-মা যদি বৃদ্ধ হয়ে যায়, ছেলেরা সংসারের হাল ধরে এমতাবস্থায় যদি বিবাহ যোগ্য কোন মেয়ে ঘরে থাকে, তার কিছু অযোগ্যতা বা পরিবারের কোন সমস্যার কারণে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বা বিয়ে হচ্ছেনা এমন বিব্রতকর ব্যাপার খুবই মর্মান্তিক। এমন পরিস্থিতিতে এই অভিভাবকদের জন্য উচিৎ হবে এই মেয়েদের জন্য উপযুক্ত পাত্রস্থ করা, তার সাথে সদয় আচরণ করা। তাহলে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এব্যাপারে রাসুল সা: এর একটি হাদিস রয়েছে এমন যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এক মহিলা তার দুটি মেয়ে সন্তানসহ আমার কাছে এসে কিছু চাইল। সে আমার কাছে মাত্র একটি খেজুরই পেল। আমি তাকে তাই দিলাম। সে তা গ্রহণ করে তা দু’ভাগে ভাগ করে দু মেয়েকে দিল। নিজে কিছুই খেল না। তারপর সে দাঁড়িয়ে গেল এবং বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে প্রবেশ করলে আমি তাকে ঐ মহিলা এবং তার মেয়েদের সম্পর্কে জানালাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ️“যে কেউ মেয়েদের নিয়ে দুঃখ কষ্টে পড়বে এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যাবহার করবে, সেগুলো তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। [বুখারীঃ ১৪১৮, মুসলিমঃ ২৬২৯]
কাজেই কারও সামনে যদি কোন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা মাতা থাকে তবে তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে মেয়েদের বিয়ের জন্য সাহায্য করা নি:সন্দেহে পূন্যের কাজ। মহান আল্লাহ আমাদের এই কথা গুলোর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন। [লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক নেত্রকোণা জার্নাল, হৃদকলমে সাহিত্য ও ইকরা ইসলামের আলো বিভাগ]