শারদীয় দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব । এই উৎসবকে ঘিরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলাতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর মাঝে কেনাকাটাসহ জমজমাট নানা রকম আয়োজন দেখা দিয়েছে । মৃৎ শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ।
উপজেলা পরিষদের তথ্যমতে, এবার এ উপজেলায় ৪৬ টি মন্দিরে দূর্গাপূজা পালিত হবে। এ উপলক্ষ্যে নেওয়া হবে বাড়তি নিরাপত্তা। সরেজমিন ঘুরে এই পূজোর আয়োজনে দেখা যায়, উপজেলার নারায়ণপুর, বাঘা ও আড়ানী পৌর এলাকা, ৭টি ইউনিয়নের পাকুড়িয়া, দিঘা, বিনোদপুর, তেঁথুলিয়া, আড়পাড়া, সরেরহাট, ঝিনা,বাউসা বেণুপুরসহ বেশ কিছু এলাকা, কারিগরেরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
মৃৎ শিল্পীরা কাদা-মাটি, খড়-কাঠ সংগ্রহ থেকে শুরু করে, ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রতিমা তৈরিতে । এই কার্যক্রম সকাল থেকে রাত অবধি চলছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখন মেতে ওঠার অপেক্ষায় শারদীয় দুর্গোৎসবে । মৃৎ শিল্পীদের মাঝে দেখা দিয়েছে এ উৎসবকে ঘিরে কর্ম ব্যস্ততা। শিল্পীদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় দিন রাত কাজ করে তৈরি করছে প্রতিমা। সময় নেই, যেন দম ফেলার কারিগরদের।
কথা হয় প্রতিমা তৈরীর কারিগর প্রতাপ দাসের সঙ্গে কাজ করতে করতে তিনি বলেন, আমার বাবা নিমাই দাস প্রতিমা তৈরীর কারিগর ছিলেন। তার হাত ধরে আমিও এই কাজ করি। রাত দিন কষ্ট করে প্রতিমা বানাতে হয়। তারপরও ভাল লাগে। একটা সুখ অনুভব করি। উপজেলা আড়ানী হালদারপাড়া গ্রামের প্রতিমা শিল্পী মিলন কুমার হালদার বলেন, মা দুর্গার আগমনে কাজের চাপ বেড়েছে , অতিদ্রুত ঘনিয়ে আসছে সময়,তাই চাপও বেশী দেখা দিয়েছে। করোনা কালের পরে এবার বেশি প্রতিমা তৈরি হওয়ায় প্রতিমা বানাতে সকাল থেকে রাত পার হয়ে যাচ্ছে। অল্প সময়ে বেশী কাজ সামাল দিতে একটু হিমশীম খাচ্ছি বলা চলে। এ বছর দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা তৈরি দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আকার ভেদে ২০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।
শঙ্খ ধ্বনি কানে আসবে । সনাতন বিশ্বাস মতে, মহালয়ার দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে পা রাখবেন। এদিন ভোরে মন্দিরে চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে আবাহন করা হবে। এবার দুর্গাদেবীর আগমন হাতিতে চড়ে ও গমন হবে হাতিতে চরে। সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর দিনে দুর্গোউৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে । দেবীর সপ্তমীবিহিত ২ অক্টোবর, দেবীর মহাঅষ্টমীবিহিত ৩ অক্টোবর, কুমারী পূজা, সন্ধি পূজা, ৪ অক্টোবর দেবীর নবমীবিহিত এবং বিজয়া দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও দর্শন বিসর্জন ৫ অক্টোবর । পূজা বিসর্জনে দিনে গ্রামের বধুরা সিধুর খেলায় মেতে উঠে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব কুমার সাহা বলেন, প্রশাসনিক নিরাপত্তা থাকায় প্রতিবছরই পূজা মন্ডপের সংখ্যা বাড়ছে। এবার ৪৬ টি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিটি পূজা মন্দিরের নিরাপত্তায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার পাশাপাশি আনসার, ভিডিপি ও পুলিশ প্রশাসন কাজ করবে। দিন তারিখ মাথায় রেখেই চলছে প্রিতি।
উপজেলা শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি সুজিত কুমার পান্ডে বাকু বলেন, আর কিছুদিন বাদেই সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাকজমকপূর্ণভাবে দূর্গাপুজা উযযাপন করা হবে। আমরা সামাজিক স¤প্রতি, ধর্মীয় সম্পৃতিতে বিশ্বাস করি। আমাদের এলাকায় হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশেই উৎসব পালন করে থাকি। পূজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততা। দম নেওয়ার এতটুকু ফুসরত নেই তাদের।
বাঘা থানার পরিদর্শক (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দুর্গাপূজার উৎসবটা বাংলাদেশে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা ইভেন্ট । আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্তক দৃষ্টিসহ নিরাপত্তার কাজে সচেষ্ট থাকবে।