সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১০:২৯ অপরাহ্ন

  • বাংলা বাংলা English English
জাহাঙ্গীরের মা আ.লীগের ‘টেনশন’!
এবি ডেস্ক রিপোর্ট / ১৫ Time View
Update : সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

আর মাত্র দুই দিন পর অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের মধ্যে তত নানামুখী চিন্তা কাজ করছে। শুধু প্রার্থী নয়, ভোটারদের মধ্যেও নতুন মেয়র কে হবেন তা নিয়ে মিশ্র আলোচনা আছে। মাঠে বিএনপির প্রার্থী না থাকার পরও টেনশনে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। নৌকাকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবেন তো তারা, নাকি সেখানে বাগড়া দেবেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা?

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির মোহাম্মদ রাজু আহমেদ, গণফ্রন্টের মো. আতিকুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম, জায়েদা খাতুন ও মো. হারুন অর রশিদ চৌধুরী। জায়েদা খাতুন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা।

আগামী ২৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে বিজয়ী করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন কেন্দ্র-গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা টিম। ২৮ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা টিমটি বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুরে অবস্থান করছেন। নৌকা প্রতীকের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা।

টিম লিডার হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে।

পরিস্থিতি বলছে, গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার অনুসারীরা জায়েদা খাতুনের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থী না থাকায় বিএনপির ভোটাররাও অনেকে জায়েদা খাতুনের দিকে ঝুঁকছেন। তবে বিএনপির ‍পুরো ভোট ব্যাংক জাহাঙ্গীর আলমের মাকে মেয়র হিসেবে চাইবেন বলে মনে করে না আওয়ামী লীগ।

জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারের ফলে আওয়ামী লীগের একাংশ কিংবা জাহাঙ্গীরের অনুসারীদের ভোটের প্রভাব নৌকায় পড়বে কি না, জানতে চাওয়া হয় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তার প্রভাব পড়বে না। প্রথম দিকে যাও একটু প্রভাব পড়েছিল, এখন তা ঠিক হয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে আওয়ামী লীগে ছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তার প্রতি সহানুভূতি ছিল। এখন আর নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমি ৬০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করি, কেউ ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করে, কেউ হয়তো ২৫ বছর আওয়ামী লীগ করে আসছে। তার এতদিনের যে অর্জন, দলের প্রতি তার যে অবদান, সে কোনো ব্যক্তির জন্য তা বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে চলে যাবে এটা হতে পারে না। সরকারি দলে কিছু কর্মী থাকে ভাসমান, তারা যেতে পারে। সেই পরিমাণটা দুই থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তার ক্ষমতার উৎস এখন বিএনপি বা জামাতের ভোট, যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাকে ভোট দেবে- এই বিশ্বাস নিয়ে তিনি প্রার্থী হননি। আমার ধারণা, তিনি মনে করেন বিএনপি জামায়াতের সব লোক তাকে ভোট দিয়ে দেবে। বাস্তবে তেমনটা হবে না।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এখনো এক হতে পারেনি। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ কাজ করছে। যারা কাজ করছে তাদের দাবি, জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা নৌকার বিরোধী নয়, তারা আজমত উল্লা খানের বিরোধী। এটা এখন স্পষ্ট যে, আজমত উল্লা খান আওয়ামী লীগের সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজে লাগাতে পারছেন না। ভোটের মাঠে এটা বড় ফ্যাক্টর হতে পারে বলে আওয়ামী লীগেরই কেউ কেউ মনে করছেন।

যদিও ২৮ দফা ইশতেহার নিয়ে নির্বাচনে নামা নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান মনে করছেন গাজীপুরবাসী এবার সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে মেয়র হিসেবে বেছে নেবেন। সেদিক থেকে এগিয়ে আছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ। যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ সেবা পেতে হলে সে প্রতিষ্ঠানে সৎ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা অনিবার্য। আশা করি গাজীপুরবাসী এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’

গাজীপুরে নৌকা প্রতীকের অবস্থান সর্ম্পকে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। আমরা সবসময় নির্বাচনে অংশ নিই। আমরা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি, ভোটারদের সাথে কথা বলছি। ভোটাররা অনেক আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে তারা গ্রহণ করেছেন। সেটি নির্বাচনের দিন ভোটের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। আমরা বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবো।’

তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি কখনো দলের ভোটে ভাগ বসাতে পারে না। নৌকার ক্ষেত্রে তা হবে না। জনপ্রিয়তার দিক থেকে অন্যরা
নৌকার ধারেকাছেও নেই।

তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন ‘টেনশন’ বা শঙ্কা কাজ করছে। নির্বাচন নিয়ে এবার সেখানে দল বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক নেতা। তবে তারা প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। আপাতত সবাই দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার কৌশল নিয়ে ভাবছেন।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজধানীর পাশের শহর হিসেবে গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র থাকাটা জরুরি মনে করছেন তারা। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্ট হওয়ায় নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা।

যদিও গাজীপুরের নেতা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে অনেক বেশি আশাবাদী। দলনিরপেক্ষ ভোটাররা আজমত উল্লা খানকে বেছে নেবেন বলে বিশ্বাস তার।

ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘দেশের ত্রিশ ভাগ মানুষ রাজনীতি করে না। যারা রাজনীতি করে তারা পছন্দের রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট দেয়। ভালো-মন্দ, যোগ্য-অযোগ্য হয়তো তারা বিচার করে না। কিন্তু ৪০ ভাগ বা ৩০ ভাগ লোক যারা রাজনীতি করে না তারা বিবেচনা করে ভোট দেয়। কে গাজীপুর সিটি চালাতে পারবে সেই হিসাব করে ৩০ শতাংশ লোক ভোট দেবে। সেটি বিবেচনায় নিলে জাহাঙ্গীরের মা, আমার মায়ের সমান তিনি, সিটি কর্পোরেশন চালাতে পারবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত গাজীপুরবাসী নিয়ে নিয়েছেন বলে মনে করি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশের মানুষ কখনো ভোট দিতে ভুল করে না। এই নির্বাচনেও মানুষ ভোট দিতে ভুল করবে না।’

তাঁর মতে, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরই জয় হবে। জাহাঙ্গীরের মা যেভাবে বিএনপির ভোট আশা করেন যদি সেভাবে পান তাহলে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তিনি বড়জোর ‘সেকেন্ড’ হতে পারেন।

সূত্রে: ঢাকা পোস্ট

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category