এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে রাশিয়ার নিয়মিত সামরিক বাহিনীর পক্ষে লড়াই করছে দেশটির বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার। শনিবার ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে মস্কোর নেতৃত্বকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিয়েছেন।
রাশিয়ার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিনটি শহরে ঢুকে পড়েছে ওয়াগনারের সৈন্যরা। দুটি শহরের সামরিক স্থাপনা কোনও ধরনের রক্তপাত ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাশিয়ার কুখ্যাত বাহিনী হিসাবে পরিচিত ওয়াগনার। এখন উত্তর দিক থেকে রাজধানী মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ওয়াগনারের সামরিক বহর।
শুক্রবার প্রিগোজিন তার বাহিনীর সদস্য সংখ্যার ব্যাপারে একটি ধারণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াগনারে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার সৈন্য রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারিতে বলেছিল, ওয়াগনার গ্রুপের ৫০ হাজারের মতো সৈন্য আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার সৈন্য ইউক্রেনে যুদ্ধ করার সময় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওয়াগনার গ্রুপের ২৫ হাজার সৈন্য এখন রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আনুমানিক ৮ লাখ সক্রিয় সৈন্যের মুখোমুখি হয়েছে।
একসময় এই বাহিনীতে ১০ লাখেরও বেশি সৈন্য রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। কিন্তু চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে কমপক্ষে ২ লাখ ২০ হাজার সৈন্য হতাহতের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হয়। তবে রাশিয়ার আরও আড়াই লাখ রিজার্ভ সৈন্য আছে বলে অনুমান করা হয়।
• যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়াগনার বাহিনী
বিবিসির এক অনুসন্ধানে বলা হয়, চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা একজন রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন সম্ভবত এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে বর্তমানে এর প্রধান হচ্ছে ধনী ব্যবসায়ী ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। যাকে ‘পুতিনের বাবুর্চি’ বলা হয়। কারণ এক সময় তিনি ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন।
ক্রিমিয়া দখলের জন্য রাশিয়া ২০১৪ সালে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা প্রথম ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকারসমর্থক বাহিনীর পাশাপাশি থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। ওই সময় তারা তেলের খনিগুলোও পাহারা দিত।
এছাড়া ওয়াগনার বাহিনী ভাড়াটি সৈন্যরা লিবিয়ায় জেনারেল খলিফা হাফতারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। আর মধ্য-আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হীরার খনি পাহারা দিতে কাজ করে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার ইসলামি জঙ্গি গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। সুদানে সোনার খনি পাহারা দেওয়ার কাজ করছে ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা।
সুদান ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর আগে, হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন. পূর্ব ইউক্রেনে বাখমুট দখলের লড়াইয়ে ওয়াগনার গ্রুপ সক্রিয় থাকার কারণ হচ্ছে প্রিগোশিন সেখানকার লবণ ও জিপসামের খনিগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
• ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা কারা?
মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা। এর মধ্যে হাজার হাজার যোদ্ধা এসেছে রাশিয়ার কারাগারগুলোতে থাকা বন্দীদের মধ্যে থেকে।
প্রথমদিকে তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ হাজার। যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য। তবে ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর এই ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় সেনা নিয়োগ শুরু করে।
রুশ শহরগুলোতে ওয়গনার গ্রুপের বিলবোর্ড দেখা যায়। তারা প্রকাশ্যেই লোক নিয়োগ করে। রুশ মিডিয়াতে তাদের দেশপ্রেমিক সংগঠন হিসেবে তুলে ধরা হয়। ওয়াগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ইউক্রেনের বুচা ও কিয়েভের নিকটবর্তী এলাকায় বেসামরিক লোকদের হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে।
জাতিসংঘ ও ফান্স সরকার এর আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগ আনে। পররে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সূত্র: বিবিসি।