বিশ্বের বৃহৎ সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির সেই চেষ্টা যেন আরও গতি পেয়েছে। ন্যাটোর অন্যতম প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক এতে সমর্থনও দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ভিন্ন। ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে প্রস্তুত নয় বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর ‘ডি ফ্যাক্টো’ সদস্য হিসেবে নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। মূলত ‘ডি ফ্যাক্টো’ বলতে এমন অবস্থা বোঝায় যা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত না হলেও বাস্তবে তা মেনে চলা হয়। অর্থাৎ ন্যাটোর সদস্য না হলেও ইউক্রেনকে সামরিক এই জোটটির ‘ডি ফ্যাক্টো’ বা কার্যত সদস্য হিসেবে নিশ্চিত করার দাবি করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বেশিরভাগ ন্যাটো সদস্য দেশ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং জোটের আসন্ন লিথুয়ানিয়া শীর্ষ সম্মেলনে কিয়েভকে ডি ফ্যাক্টো সদস্য হিসেবে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
একইসঙ্গে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের আরও প্রতিশ্রুতি ভিলনিয়াসের এই সমাবেশ থেকে মিলবে বলেও সোমবার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মূলত মঙ্গলবার লিথুয়ানিয়ার রাজধানীতে শুরু হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর দু’দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস-সহ জোটের ৩১টি সদস্য দেশের নেতারা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
সম্মেলনের দু’দিন প্রধানত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েই আলোচনা করবেন তারা। অবশ্য এই সম্মেলনের ওপর সতর্ক নজর রাখছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সোমবার জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণে বলেন, ‘সামরিক এই জোটটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দেশ আমাদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। আমরা যখন ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম, তখন আমরা অকপটে বলেছিলাম: বাস্তবে, ইউক্রেন এই জোটের মধ্যেই রয়েছে। আমাদের হাতে যে অস্ত্র রয়েছে তা এই জোটেরই অস্ত্র। এই জোট যা বিশ্বাস করে সেটাই আমাদের মূল্যবোধ… ভিলনিয়াসকে অবশ্যই এই সব নিশ্চিত করতে হবে।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে এই সংঘাত চলছে। দীর্ঘ এই সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য ন্যাটো মিত্র দেশও ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই সম্মেলন থেকেও নতুন অস্ত্র পাওয়ার ঘোষণা পেতে চায় ইউক্রেন।
আল জাজিরা বলছে, ন্যাটো সদস্য দেশগুলো সহায়তা হিসেবে ইউক্রেনকে ঠিক কোন ধরনের অস্ত্র দেবে এবং কি পরিমাণে তা কিয়েভকে সরবরাহ করা হবে সে সম্পর্কে বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরও কিছু পাওয়ার বিষয়ে বেশ আশ্বস্ত বলেই মনে হচ্ছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, ভিলনিয়াস (ন্যাটো সম্মেলন) থেকে আমাদের সেনা সদস্যদের জন্য অস্ত্র সংক্রান্ত ইতিবাচক খবর থাকতে পারে।’
ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, যুদ্ধের সময় কিয়েভ ন্যাটোর সদস্য হবে না এবং শীর্ষ সম্মেলন থেকে দেশটিকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও জারি করা হবে না। তবুও যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ইউক্রেনকে কত দ্রুত এই জোটটিতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া উচিত তা নিয়ে মিত্র দেশগুলোও বিভক্ত।
যদিও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো বলছে, ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে কিয়েভকে একটি রোড ম্যাপ দেওয়া উচিত। তারপরও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই জোটকে সরাসরি যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি।